ইসলামের শিষ্টাচার ও বিধান অনুযায়ী, খাদ্য ও প্রসাধনীতে অ্যালকোহল ব্যবহারের বিষয়ে অনেক আলেম ও ফকিহদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। ইসলামে অ্যালকোহলকে হারাম বা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, কারণ এটি মাদকদ্রব্যের অন্তর্ভুক্ত। তবে প্রসাধনী এবং অন্যান্য দ্রব্যে অ্যালকোহলের ব্যবহার কিছু নির্দিষ্ট শর্তের উপর ভিত্তি করে বৈধ বা অবৈধ হতে পারে। এ বিষয়ে ইসলামী আইন অনুযায়ী বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হবে।
অ্যালকোহল কি এবং এর প্রকারভেদ
প্রথমেই জানতে হবে অ্যালকোহল কি এবং এর বিভিন্ন প্রকারভেদ। সাধারণত অ্যালকোহলকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়:
- ইথানল (Ethyl Alcohol): এটি মদ তৈরির মূল উপাদান এবং মানব শরীরের জন্য ক্ষতিকর। ইসলামে ইথানল মদ হিসেবে পরিচিত এবং এর সেবন ও ব্যবহার সম্পূর্ণ হারাম।
- ইসোপ্রোপানল (Isopropyl Alcohol) এবং অন্যান্য শিল্পজাত অ্যালকোহল: এই ধরনের অ্যালকোহল মূলত মেডিসিন, প্রসাধনী এবং বিভিন্ন শিল্পজাত দ্রব্যে ব্যবহৃত হয়। এগুলোর প্রভাব শরীরে ভিন্ন ধরনের, এবং এগুলো খাওয়ার জন্য নয়, বরং বাহ্যিক ব্যবহার বা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়।
খাদ্য দ্রব্যে অ্যালকোহল
খাদ্যপণ্যে অ্যালকোহলের মিশ্রণ ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে স্পষ্টভাবে হারাম হিসেবে চিহ্নিত। যখন কোনো খাদ্য বা পানীয়তে ইথানল মিশ্রিত হয়, তখন তা সেবন করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে মদকে হারাম ঘোষণা করেছেন:
“তোমাদের জন্য মদ ও জুয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে।” (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত ৯০)
এই আয়াত থেকে স্পষ্ট হয় যে, যেকোনো ধরনের মাদক দ্রব্য, বিশেষত যেখানে ইথানল রয়েছে, তা হারাম।
তবে কিছু ক্ষেত্রে অল্প পরিমাণ অ্যালকোহল খাদ্যে ব্যবহৃত হয়, যেমন বেকিং পাউডার বা বিভিন্ন বেকড পণ্যতে। যদি অ্যালকোহল সেই খাদ্যে পুরোপুরি উবে যায় এবং এর কোনো প্রভাব না থাকে, তাহলে কিছু আলেম এ ব্যাপারে শিথিলতা প্রদান করেছেন, তবে এতে সতর্কতা বজায় রাখা উচিত।
প্রসাধনী দ্রব্যে অ্যালকোহল
প্রসাধনী দ্রব্যে অ্যালকোহল ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিধান কিছুটা ভিন্ন। প্রসাধনী দ্রব্য যেমন পারফিউম, ক্রিম, লোশন এবং অন্যান্য প্রসাধনীতে ইসোপ্রোপানল বা ইথানল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এখানে দুটি দিক বিবেচনা করতে হবে:
- ইথানল-যুক্ত প্রসাধনী: ইথানল যদি প্রসাধনীতে ব্যবহার করা হয় এবং তা সরাসরি শরীরে বা পোশাকে প্রয়োগ করা হয়, তাহলে তা অবৈধ হিসেবে গণ্য হতে পারে। কারণ, ইথানল নাপাক এবং এটি মানব শরীরে সরাসরি প্রয়োগ করা ঠিক নয়। বিশেষ করে নামাজের সময় এটি ব্যবহারে সমস্যা তৈরি হতে পারে।
- ইসোপ্রোপানল-যুক্ত প্রসাধনী: ইসোপ্রোপানল এবং অন্যান্য অ্যালকোহল শিল্পজাত দ্রব্যের অংশ হিসেবে প্রসাধনীতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটি সরাসরি মদ হিসেবে ব্যবহার করা হয় না এবং শরীরের বাহ্যিক প্রয়োগের জন্য ব্যবহৃত হয়। ফলে অনেক আলেম এ ধরনের প্রসাধনী ব্যবহারে অনুমতি প্রদান করেছেন, কারণ এটি নাপাক নয় এবং এর ব্যবহার শরীরের জন্য ক্ষতিকরও নয়।
মেডিকেল ও প্রয়োজনীয় পণ্য
কিছু ক্ষেত্রে অ্যালকোহল মেডিকেল পণ্য হিসেবে ব্যবহার হয়, যেমন স্যানিটাইজার বা ইনজেকশন। এসব ক্ষেত্রে ইসলাম শর্তসাপেক্ষে অ্যালকোহল ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে, কারণ এটি প্রয়োজনীয়তা ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে অপরিহার্য। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“যা নিরাময়ের উপায়, তা হারাম নয়।” (ইবনে মাজাহ)
তাই যেখানে অ্যালকোহল ব্যবহার প্রয়োজনীয়, যেমন সংক্রমণ প্রতিরোধে স্যানিটাইজার ব্যবহার, সেখানে তা বৈধ হতে পারে।
উপসংহার
খাদ্য ও প্রসাধনীতে অ্যালকোহল ব্যবহারের বিধান ইসলামিক শিষ্টাচার এবং শর্তের উপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। খাদ্যে ইথানল ব্যবহৃত হলে তা স্পষ্টভাবে হারাম, কিন্তু প্রসাধনী বা মেডিকেল পণ্যে অ্যালকোহল ব্যবহারে কিছু শর্তের ভিত্তিতে শিথিলতা রয়েছে। মুসলিমদের উচিত সর্বদা সতর্ক থাকা এবং যেসব পণ্য সন্দেহজনক মনে হয়, তা এড়িয়ে চলা।