দাদের চিকিৎসা

দাদ রোগের লক্ষন, কারন ও চিকিৎসা। দাদের চিকিৎসায় জেনে নিন করণীয়

দাদের লক্ষণ, কারন ও চিকিৎসা

দাদ একটি সাধারণ ত্বকের সংক্রমণ যা ফাঙ্গাসের কারণে হয়। এটি সাধারণত দেহের বিভিন্ন স্থানে দেখা যায়, বিশেষ করে গরম ও আর্দ্র স্থানে। দাদ হতে পারে অবাঞ্ছিত, কারণ এটি চুলকানি এবং অস্বস্তির কারণ হতে পারে। তবে, সঠিক চিকিৎসা এবং সতর্কতার মাধ্যমে এটি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

দাদের লক্ষণ

দাদ (Ringworm) একটি ছত্রাকজনিত রোগ, যা ত্বকে, মাথার ত্বকে, বা নখে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। এটি সাধারণত চামড়ার উপরের স্তরে ঘটে এবং এটি অনেকগুলি লক্ষণের মাধ্যমে চিহ্নিত করা যায়। দাদের লক্ষণগুলি সাধারণত নিম্নরূপ:

  1. গোলাকার দাগ: দাদ সাধারণত গোলাকার বা আয়তাকার দাগ আকারে দেখা যায়, যা সাধারণত ভিতর থেকে বাইরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। এই দাগগুলির মাঝের অংশ সাধারণত স্বচ্ছ থাকে।
  2. রং পরিবর্তন: আক্রান্ত স্থানের ত্বক সাধারণত রঙ পরিবর্তন করে, যা লাল, বাদামী বা সাদা হতে পারে।
  3. চুলকানি: দাদ আক্রান্ত স্থানে চুলকানি হতে পারে, যা রোগীর জন্য অস্বস্তিকর। এই চুলকানি সাধারণত রাতে বাড়তে পারে।
  4. শুকনো ত্বক: দাদের কারণে আক্রান্ত স্থান শুকনো এবং খসখসে হতে পারে।
  5. ফেটে যাওয়া ত্বক: কখনও কখনও, দাদ আক্রান্ত স্থানের ত্বক ফেটে যেতে পারে, যা ব্যথা এবং অস্বস্তির কারণ হতে পারে।
  6. পিলিং বা স্কেলিং: দাদ আক্রান্ত স্থানে ত্বক পিলিং বা স্কেলিং হতে পারে, যা সংক্রমণের আরেকটি লক্ষণ।
  7. মাথার দাদ: মাথার ত্বকে দাদ হলে, চুল পড়া এবং মাথার ত্বকে ফোলা হতে পারে।
  8. নখের দাদ: যদি দাদ নখে ঘটে, তবে নখগুলো দুর্বল, ভঙ্গুর এবং বদলে যেতে পারে।

দাদের কারণ

দাদ (Ringworm) একটি ছত্রাকজনিত সংক্রমণ যা ত্বক, মাথার ত্বক, বা নখে ঘটতে পারে। এই সংক্রমণের পিছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। নিম্নলিখিত কারণগুলো দাদের ঘটনার প্রধান উৎস:

  1. ছত্রাক সংক্রমণ: দাদ মূলত Trichophyton, Microsporum, এবং Epidermophyton নামক ছত্রাকের কারণে ঘটে। এই ছত্রাকগুলি মানুষের ত্বক, চুল এবং নখের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে বাস করে।
  2. প্রশ্নাত্মক পরিবেশ: আর্দ্র এবং গরম পরিবেশে ছত্রাকের বৃদ্ধি দ্রুত ঘটে। তাই গ্রীষ্মকাল বা বৃষ্টির সময় দাদের সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  3. ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা: অস্বাস্থ্যকর বা অপরিচ্ছন্ন জীবনযাত্রা, যেমন ঘনিষ্ঠভাবে অপরিষ্কার কাপড় বা বিছানায় শুয়ে থাকা, দাদের সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়ায়।
  4. চামড়ার ক্ষত: ত্বকের ক্ষত, কাটা বা ফাটল দাদ সংক্রমণের প্রবেশদ্বার হতে পারে। যদি ত্বক কোনওভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে ছত্রাক সহজেই প্রবেশ করতে পারে।
  5. সক্রিয় জীবনযাত্রা: খেলাধুলা বা অন্যান্য শারীরিক কার্যকলাপে অংশগ্রহণের সময় ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এবং অব্যবহৃত সরঞ্জামের ব্যবহার দাদের সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
  6. অন্যদের সংস্পর্শে আসা: দাদ একটি সংক্রামক রোগ। আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে সরাসরি যোগাযোগ অথবা তাদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র, যেমন তোয়ালে, কাপড়, বা খেলনা ব্যবহার করাও সংক্রমণের কারণ হতে পারে।
  7. প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, যেমন রোগ, অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অসুখ, বা কিছু ওষুধ গ্রহণের কারণে দাদের সংক্রমণ হতে পারে।
  8. পোষা প্রাণী: কিছু সময়ে পোষা প্রাণী, বিশেষ করে বিড়াল ও কুকুর, দাদের কারণ হতে পারে। এই প্রাণীদের সংস্পর্শে আসা দাদ সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।

দাদের চিকিৎসা

  1. দাদমলম (Antifungal Ointment): Clotrimazole এবং Miconazole এর মতো ফাঙ্গাল মলম ব্যবহার করা যেতে পারে, যা দাদের সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে।
  2. বাজারে প্রাপ্ত দাদ চিকিৎসার মলমের নাম:
    Econate (Econazole Nitrate) ব্যবহার: আক্রান্ত স্থানে দিনে ১-২ বার প্রয়োগ করুন। ২-৩ সপ্তাহ পর্যন্ত ব্যবহার করুন অথবা ডাক্তার নির্দেশনা অনুসারে।
    Butefin – Square Pharma ব্যবহার: আক্রান্ত স্থানে ভালোভাবে মলম লাগিয়ে ম্যাসেজ করুন। দিনে ১-২ বার প্রয়োগ করুন এবং ২-৩ সপ্তাহ ব্যবহার করুন।
    Tenafin – Beximco ব্যবহার: আক্রান্ত অংশে দিনে ১-২ বার মলম ব্যবহার করুন। লক্ষণগুলো উন্নত না হওয়া পর্যন্ত ব্যবহার চালিয়ে যান।
    Nizoder – UniMed ব্যবহার: আক্রান্ত স্থানে দিনে ১-২ বার প্রয়োগ করুন। চিকিৎসা শুরু করার পর ২-৩ সপ্তাহ ব্যবহার অব্যাহত রাখুন।
    Fungidal – Square Pharma ব্যবহার: দিনে ১-২ বার আক্রান্ত স্থানে প্রয়োগ করুন। ২-৪ সপ্তাহ ব্যবহার করুন অথবা ডাক্তার নির্দেশনা অনুসারে।
    Aristen – Aristo Pharma ব্যবহার: আক্রান্ত স্থানে দিনে ১-২ বার লাগান এবং ৩-৪ সপ্তাহ ব্যবহারের জন্য প্রয়োগ করুন।
  3. সালিসিলিক অ্যাসিড (Salicylic Acid):এই উপাদানটি মৃত ত্বককে অপসারণে সাহায্য করে এবং দাদ থেকে মুক্তি দেয়।
  4. সালফার মলম:এটি কিছু দাদ আক্রান্ত ত্বকের জন্য কার্যকর হতে পারে।
  5. প্রতিরোধী ব্যবস্থা:আক্রান্ত স্থানকে পরিষ্কার ও শুকনো রাখুন।খুব বেশি ঘেমে গেলে জায়গাটি ভালোভাবে শুকিয়ে ফেলুন।যদি দাদ খুব বেশি ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে ডাক্তারকে দেখানো উচিত।

চিকিৎসার সময় কিছু সাধারণ সতর্কতা:

  • দাদ আক্রান্ত স্থানগুলি হাত না লাগান, কারণ এটি ছড়াতে পারে।
  • অন্যের সঙ্গে তোলে বা কাপড় ভাগাভাগি করবেন না।

দাদ সমস্যা সমাধানে এই মলমগুলি কার্যকর হতে পারে। তবে, যদি সমস্যা চলতে থাকে বা অবস্থা গুরুতর হয়ে ওঠে, তাহলে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক চিকিৎসা ও যত্নের মাধ্যমে দাদ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

About Mahmud

Check Also

অনিয়মিত পিরিয়ড কেন হয় ? অনিয়মিত মাসিক এর কারণ, লক্ষণ এবং চিকিৎসা

অনিয়মিত ঋতুস্রাব একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণেই হতে পারে। এর ফলে মাসিক চক্রের সময় …

Leave a Reply