এলার্জির লক্ষণ, কারন ও চিকিৎসা

এলার্জির লক্ষণ

এলার্জি একটি প্রতিরক্ষা প্রতিক্রিয়া যা শরীরের ইমিউন সিস্টেম অস্বাভাবিকভাবে কোনো নির্দিষ্ট পদার্থের (অ্যালার্জেন) প্রতি প্রতিক্রিয়া জানালে ঘটে। এলার্জির লক্ষণগুলি সাধারণত অ্যালার্জেনের সাথে সংস্পর্শে আসার পর প্রকাশিত হয় এবং এগুলি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। নিম্নলিখিত এলার্জির প্রধান লক্ষণগুলি উল্লেখযোগ্য:

  1. চুলকানি: এলার্জির কারণে ত্বক, নাক, অথবা চোখে চুলকানি হতে পারে। এটি একটি সাধারণ লক্ষণ এবং সাধারণত অস্বস্তির সৃষ্টি করে।
  2. লাল দাগ বা র‍্যাশ: এলার্জির প্রতিক্রিয়া হিসেবে ত্বকে লাল দাগ বা র‍্যাশ দেখা দিতে পারে। এটি সাধারণত অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে আসার পর ঘটে।
  3. নাক দিয়ে পানি পড়া: এলার্জির কারণে নাক দিয়ে পানি পড়া বা নাক বন্ধ হওয়া লক্ষণ হতে পারে। এটি সাধারণত পেট্রিসে বা শীতকালে ঘটে।
  4. চোখের লক্ষণ: এলার্জির কারণে চোখে চুলকানি, লালচে ভাব, বা জল পড়া হতে পারে। এটি সাধারণত পোলেন বা ধূলার কারণে ঘটে।
  5. কাশি: এলার্জির কারণে কাশি হতে পারে, বিশেষ করে যদি অ্যালার্জেন শ্বাসনালীতে প্রবেশ করে।
  6. শ্বাসকষ্ট: কিছু লোকের জন্য এলার্জি শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি করতে পারে, যা অস্থমার লক্ষণের মতো হতে পারে।
  7. গলা খুসখুস করা: এলার্জির কারণে গলা খুসখুস করা বা জ্বালা হতে পারে।
  8. পেটের সমস্যা: কিছু ক্ষেত্রে, খাদ্য এলার্জির কারণে পেটের ব্যথা, বমি, বা ডায়রিয়া হতে পারে।
  9. হৃদপিণ্ডের ধড়ফড়: গুরুতর এলার্জি প্রতিক্রিয়া (অ্যানাফাইল্যাক্সিস) হলে হৃদপিণ্ডের ধড়ফড় বা চাপের পরিবর্তন হতে পারে।

এলার্জির কারণ

এলার্জি একটি প্রতিরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়া যা শরীরের ইমিউন সিস্টেম অস্বাভাবিকভাবে কিছু নির্দিষ্ট পদার্থের (অ্যালার্জেন) প্রতি প্রতিক্রিয়া জানালে ঘটে। এলার্জির কারণগুলি প্রধানত নিম্নরূপ:

  1. পর্যায়ক্রমিক অ্যালার্জেন:
    • পোলেন: গাছ, ঘাস ও ফুল থেকে উৎপন্ন পোলেন হল একটি সাধারণ অ্যালার্জেন, যা শীতকালে ও বসন্তকালে বিশেষ করে বাড়িতে থাকে।
    • ধুলা: ঘরের ধুলা ও ধুলাবালির অণু এলার্জির অন্যতম কারণ।
  2. পশুদের অ্যালার্জেন:
    • পশুর লোম: বিড়াল, কুকুর ও অন্যান্য পোষা প্রাণীর লোম ও ত্বক এলার্জির কারণ হতে পারে।
    • পশুর মূত্র: পশুর মূত্রের মধ্যে উপস্থিত কিছু উপাদানও এলার্জি সৃষ্টি করতে পারে।
  3. ফুড এলার্জেন:
    • দুধ, ডিম, বাদাম, মাছ, গম: এই ধরনের খাবারের প্রতি কিছু মানুষের এলার্জি থাকতে পারে, যা গুরুতর শারীরিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
  4. মৌসুমি এলার্জেন:
    • ফাঙ্গাল স্পোর: ছত্রাকের স্পোর বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে এলার্জি সৃষ্টি করতে পারে।
    • গাছের পাতা ও ফুল: কিছু গাছের পাতা ও ফুলের রসও এলার্জির কারণ হতে পারে।
  5. রাসায়নিক অ্যালার্জেন:
    • শরীরের যত্নের পণ্য: সাবান, শ্যাম্পু, বিউটি প্রোডাক্টস এবং অন্যান্য রাসায়নিক পণ্যে উপস্থিত কিছু উপাদান এলার্জি সৃষ্টি করতে পারে।
    • কেমিক্যাল অ্যালার্জেন: রঞ্জক, পেইন্ট, এবং অন্যান্য শিল্পজাত দ্রব্যেও এলার্জি হতে পারে।
  6. শারীরিক অবস্থান:
    • জেনেটিক প্রভাব: এলার্জি অনেক সময় পরিবারের মধ্যে প্রবাহিত হয়, তাই যদি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে এলার্জি থাকে, তবে আপনারও এলার্জির ঝুঁকি বেড়ে যায়।
    • বয়স: শিশুদের মধ্যে এলার্জি বেশি দেখা যায়, তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু লোকের এলার্জির লক্ষণ কমে যেতে পারে।
  7. অন্যান্য স্বাস্থ্য পরিস্থিতি:
    • দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: যদি আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়, তবে আপনি অ্যালার্জির প্রতি বেশি সংবেদনশীল হতে পারেন।

এলার্জির কারণগুলো ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে, তাই উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। এলার্জি প্রতিরোধের জন্য অ্যালার্জেন চিহ্নিত করা এবং এড়িয়ে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এলার্জির চিকিৎসা

এলার্জির চিকিৎসা লক্ষ্য করে রোগীর লক্ষণগুলো কমানো এবং অ্যালার্জেনের সাথে সংস্পর্শে আসা প্রতিরোধ করা। এলার্জির চিকিৎসার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে, যা নিম্নরূপ:

  1. অ্যান্টিহিস্টামিন:
    • অ্যালার্জি থেকে সৃষ্ট চুলকানি, নাক দিয়ে পানি পড়া, এবং চোখে জ্বালার লক্ষণ কমাতে অ্যান্টিহিস্টামিন ব্যবহৃত হয়। এগুলো সাধারণত সাপ্লিমেন্ট হিসাবে পাওয়া যায় এবং প্রেসক্রিপশন ছাড়াই কিনতে পাওয়া যায়।
  2. স্টেরয়েড স্প্রে:
    • নাসাল কংজেশন বা নাক বন্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে নাসাল স্টেরয়েড স্প্রে খুব কার্যকর। এটি নাসারন্ধ্রের প্রদাহ কমায় এবং শ্বাসের সমস্যা দূর করে।
  3. লিউকোট্রিয়েন রিসেপ্টর অ্যান্টাগোনিস্ট:
    • এই ধরনের ওষুধ এলার্জি উপসর্গগুলোর বিরুদ্ধে কার্যকরী। এটি শ্বাসকষ্ট ও নাকের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
  4. অ্যালার্জি শট (ইমিউনোথেরাপি):
    • দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার জন্য অ্যালার্জি শট ব্যবহার করা হয়, যেখানে রোগী ধীরে ধীরে অ্যালার্জেনের প্রতি সংবেদনশীলতা বাড়ানোর জন্য নিয়মিত ছোট ডোজ দেওয়া হয়। এটি এলার্জির দীর্ঘমেয়াদী প্রতিকার হতে পারে।
  5. স্টেরয়েড ট্যাবলেট:
    • গুরুতর এলার্জির প্রতিক্রিয়া হলে, যেমন অ্যানাফাইল্যাক্সিসের ক্ষেত্রে, চিকিৎসক স্টেরয়েড ট্যাবলেট প্রেসক্রাইব করতে পারেন, যা ত্বরিত উপশমে সহায়ক।
  6. প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:
    • এলার্জির চিকিৎসার জন্য অ্যালার্জেন এড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, পোলেনের মৌসুমে বাইরে যাওয়া কমানো, পোষা প্রাণীর সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকা এবং রাসায়নিক পণ্য ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করা।
  7. সাপোর্টিভ চিকিৎসা:
    • এলার্জির লক্ষণগুলোর কারণে যদি জীবনযাত্রায় সমস্যা হয়, তবে মানসিক সহায়তা ও কাউন্সেলিংও সহায়ক হতে পারে।

এলার্জির চিকিৎসা সাধারণত রোগীর উপসর্গ এবং অ্যালার্জির ধরণ অনুসারে নির্ধারিত হয়। তাই, এলার্জির লক্ষণ দেখা দিলে এবং চিকিৎসা শুরু করার আগে একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক চিকিৎসা এবং ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এলার্জির উপসর্গগুলিকে কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

 

About Mahmud

Check Also

অনিয়মিত পিরিয়ড কেন হয় ? অনিয়মিত মাসিক এর কারণ, লক্ষণ এবং চিকিৎসা

অনিয়মিত ঋতুস্রাব একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণেই হতে পারে। এর ফলে মাসিক চক্রের সময় …

Leave a Reply