মহামারী শেষ হলেও ফেস মাস্ক পরার প্রয়োজনীয়তা শেষ হবেনা !

মহামারী শেষ হলেও প্রয়োজনীয়তা শেষ হবেনা ফেস মাস্কের

করোনা আমাদেরকে বেশ কিছু নতুন জীবনাভ্যাস গড়ে তুলতে বাধ্য করেছে। মুখে মাস্ক পরা, হাতে স্যানিটাইজার দেয়া, একজন আরকেজন থেকে দূরে থাকা প্রভৃতি। মহামারী শেষ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে আসলে মহামারী চলাকালীন সময়ের বেশীরভাগই হয়তো আমরা মিস করবো না। কোয়ারেনটাইনের একাকিত্ত কিংবা হাতের গ্লাভস, মুখের মাস্ক, হ্যান্ড সানিটাইজার এগুলো কিছুই মিস করার মত জিনিস নয়। ডাক্তাররাও কোনও রোগীর পরিবারকে এটা বলতে মিস করবে না যে তারা জরুরি বিভাগে প্রিয়জনের সাথে দেখা করতে পারবেনা। ভাইরাসটি কেউ নিজের পরিবারে, ঘরে নিয়ে এসেছে কিনা সেই ভাবনাও নিশ্চই মিসে করবেননা।

তবে আমরা আশা করতে পারি, যদিও কোভিড-১৯ চলে যাওয়ার পরেও এই সময়কালীন কয়েকটি অভ্যাস আমরা রেখে দেবো। মুখের মাস্ক সেগূলো তালিকের সর্ব শীর্ষে।

বেশিরভাগ মানূষ কোভিড -১৯ এর টিকা নেবার পরে, মাস্কের প্রয়োজনীয় কমে যাবে। মাস্ক পড়ার জন্য সরকারি আদেশ তুলে নেয়া হবে এবং মাস্ক পরার সংখ্যা পুরোপুরি কমে যাবে। তবে মহামারীটি মুখের মাস্কের মূল্যটিকে দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণ করেছে। এবং এগূলো করোনার সংক্রমন প্রতিরোধ ছাড়াও নির্দিষ্ট আরও কিছু পরিস্থিতিতেও রাখা উচিত।

মাস্কের উপকারিতা বিতর্কিত হয়নি। আমার মাস্ক পরা নিশ্চিতভাবে রোগীদের রক্ষা করে; এজন্যই ডাক্তার এবং সার্জনেরা অপারেটিং রুমে বা জীবাণুমুক্ত করার প্রক্রিয়ায় মাস্ক পরে থাকেন। মাস্ক আমাদের ফ্লুতে বা যক্ষ্মায় আক্রান্ত সহকর্মী থেকে বাঁচায়। অন্যদিকে জনসাধারণের জন্য মাস্কের মূল্য সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়া বিতর্কে ভরা এবং এই মহামারীর শুরু থেকেই তা নাটকীয়ভাবে বিকশিত হয়েছে।

মহামারী শুরু হওয়ার সাথে সাথে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের জনসাধারণের মাস্ক পরার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ভুল ধারনা ছিল। টয়লেট পেপার এবং ময়দা কিনে জমিয়ে রাখবে এই ভয়ে সাস্থবিদরা জনসাধারনকে মাস্ক পরার উপদেশ দিতে দিধা বোধ করতেন। জনসাধারনের মাস্ক পরার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আমাদের অনুমানগুলি গভীরভাবে ভুল প্রমাণিত হয়েছে। তবে ২০২০ সালের এপ্রিলের মধ্যে আমরা বুঝতে পারি যে পাবলিক মাস্কিং কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

কারণ করোনা আশেপাশের লক্ষন যুক্ত এবং লক্ষনহীন ব্যক্তিদের দ্বারা ছড়ায় তাই কেবল “আপনি অসুস্থ থাকলে বাড়িতেই থাকুন” এটা ফলো করলেই ভাইরাসের সংক্রমন ছড়ানো সরানো যায়না। কারণ ভাইরাসটি বাতাসে ছড়ায়, অন্য ব্যক্তিদের থেকে কেবল ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রাখাও অপর্যাপ্ত। কেবল মাত্র উন্নতমানের মাস্ক দিয়েই আপনি বাতাসে ছড়ানো ভাইরাসগুলো থেকে মুক্ত থাকতে পারেন। এবং যদিও এন ৯৫ মাস্কগুলোই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য, আমরা এও জেনেছি যে এমনকি কাপড়ের মাস্কগুলোও ভাইরাস দূরে রাখতে দুর্দান্ত কাজ করে।

অন্য কথায়, লোকেরা যখন কার্যকরীভাবে ভালো মানের মাস্ক পরেন, এর মাধ্যমে করোনার সংক্রমন নাটকীয়ভাবে হ্রাস পায়।

একবারে মহামারী বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চলে হয়ে গেলেও সম্ভবত কয়েক বছর ধরে কোভিড -১৯ এর বিক্ষিপ্ত প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে, বিশেষত কম টিকা দেওয়া হয়েছে কিংবা নতুন ভ্যারিয়েন্ট দেখা দিয়েছে অঞ্চলগুলোতে। এই ক্ষেত্রে, আমাদের আরও একবার সাময়িকভাবে মাস্ক পরার প্রস্তুতি নিয়ে রাখা উচিত। যতক্ষণ না মহামারীটি পুরোপুরি চলে না যায় ততক্ষণ মানব সম্প্রদায় সুরক্ষিত রাখতে মাস্ক ব্যবহারের বিকল্প নেই।

আবার অনেক ক্ষেত্রে এমন লোকদের দল থাকবে যাদের টিকা দেওয়ার পরেও তারা কোভিড -১৯ থেকে সম্পূর্ণরূপে সুরক্ষিত থাকবেনা। আমাদের ইতিমধ্যে গবেশনায় দেখা গিয়েছে যে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো নয় তারা পুরো পুরি ঝুঁকি মুক্ত হবেননা। এই লোকেদের নিরাপত্তার স্বার্থে জনসাধারণের মধ্যে মাস্ক পরতে উৎসাহ দেওয়া উচিত। জনসাধারণের পরিবহন, শপিং মল বা অন্যান্য জমায়েত হবার অবস্থানগুলিতে কিংবা জনাকীর্ণ স্থানে মাস্ক পরার ব্যপারটি অবজ্ঞা করলে তা অন্যদের জন্য ঝুঁকি পূর্ণ হয়ে পরে।

আরও একটি ব্যপার না বললেই নয়। এই বছর ফ্লুতে আক্তান্ত মানূষের সংখ্যা নিতান্তই কম। যদিও কোভিডের সাথে ফ্লু’র তুলনা চলেনা কিন্তু ফ্লূও একটি মারাত্মক রোগ। প্রতিবছর সাধারণত ইনফ্লুয়েঞ্জায় ১২,০০০ – ৬০,০০০ মানূষ মারা যায়। কিন্তু এ বছর ফ্লুর অনুপস্থিতি প্রকৃতির এক দুর্দান্ত উপহার।

বিশ্বজুড়ে শিশু বিশেষজ্ঞরা আপনাকে বলবেন যে তারা এই বছর কত তিব্র আকারে “শীতকালীন ভাইরাস” এর সংক্রমন দেখেছেন। এক্ষেত্রে মাস্ক ব্যবহারের অবদান অনস্বীকার্য। এটি একটি অসাধারণ অভ্যাস এবং পুনরাবৃত্তি করার মতো।

চূড়ান্ত বিষয় হল আমরা সকলেই কিন্তু বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে মাস্ক ব্যবহার করতে ইচ্ছুক, কিন্তু কোভিড -১৯ এর মতো বড় হুমকি চলে গেলে মাস্ক এর ব্যবহার কমে যাবে এবং প্রতি বছর ফ্লুতে মারা যাবার হারও বেড়ে যাবে। মাস্কের কোন ধর্মীয় বা জাতিগত তাৎপর্য নেই, এটার ব্যবহার নাগরিক অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ বলে মনে হয় না বিধায় সামগ্রিক স্বার্থে মাস্ক পরার ব্যপারটিকে অনুপ্রানিত করতে হবে।

বিশেষ করে কোভিড ১৯ এর প্রাদুরভাবের কারনে বিভিন্ন দেশে মাস্ক এখন স্বাভাবিক একটি জিনিসে পরিনত হয়েছে। আমেরিকাতেও এটি ঘটতে দেখা যাচ্ছে। মাস্ক’কে অসহ্য বা ভয়ানক কিছু মনে করার কোন কারন নেই। সময়ের প্রয়োজনে আপনার জীবনের অংশ হিসেবে এবং ফ্যাশনের একটি উপায় হিসেবে মাস্ক অন্তর্ভুক্ত করে নিন, এবং দেশ ও জাতির নিরাপত্তা রক্ষায় ভূমিকা রাখুন।

ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের সাম্প্রতিক সংঘাত নিয়ে কিছু লেখা পড়ুন –

https://smartworld.cc/1803/the-skunk-another-israeli-weapon-for-collective-punishment

https://bicchuron.com/3204/why-usa-supports-israel

https://smartworld.cc/1719/israeli-palestinian-conflict-2021/

অন্যান্য লেখা

https://bicchuron.com/3150/bangladesh-corona-2nd-wave

https://smartworld.cc/1594/scary-side-effect-taking-fish-oil

https://smartworld.cc/1587/matha-bethar-ghoroa-protikar

https://smartworld.cc/1518/why-mustard-oil-is-banned/

https://smartworld.cc/1503/allergies/

ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কোর্স, পিএইচপি শিখুন-

About Mahmud

Check Also

কিভাবে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের টিকা নিতে পারবেন?

আপনি যদি করোনা ভাইরাসের টিকা নিতে চান তবে আপনাকে সরকারি ভাবে ভ্যাক্সিন নেবার জন্য নিবন্ধন …

Leave a Reply