২১শে ফেব্রুয়ারির দুর্বার জাতি

নিঃসন্দেহে আপনি বলতে পারেন, বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে আমরা পিছিয়ে আছি পশ্চিমা বিশ্বের চেয়ে। আমাদের উল্লেখযোগ্য অবদান হাতেগনা। উল্টো দুর্নীতি, দারিদ্রতা, অরাজক ভারসাম্যহীন রাজনীতি, পরনির্ভরশীলতার নাম যদি কেউ নেয় তখনই আমাদের নাম এসে পরে। এইতো সেদিনও আমাদের Banana Republic বলে আখ্যায়িত করতো তারা। কিন্তু সব সময়ই কি নির্বোধ ছিল এই জাতি? তাহলে কারা স্বাধীন করলো এই দেশ? কারা যুদ্ধ করলো শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর সাথে? তবে কারা নিজেদের সম্ভাব্য মৃত্যু জেনেও রাস্তায় নেমে প্রাণ দিলো ভাষার জন্য? কারা মাথা নোয়ায় নি? হ্যাঁ, এখন কথাগুলো অস্বাভাবিক লাগবে সেই জাতির কাছে যারা টিকটক নিয়ে মাতামাতি করছে, কিংবা একটু স্বাভাবিক পর্যায়ের হলে, ফেসবুকের কোন পোস্ট নিয়ে। আর এখন আমরা ভুলেই গিয়েছি সংবাদ মাধ্যমও কি আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে সমাজে, একটি দেশে। কারন এখনকার সাংবাদিকদের স্বৈরাচারী পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে কলম ধরে মারা যেতে হয় না। তাদের লড়াই করতে হয় না ভাষার জন্য। কারন তারা এখন খুব ব্যস্ত ক্রিকেটার নাসির কাকে বিয়ে করলো, কোন নায়িকা দুপুরে কী দিয়ে নাস্তা করলো। ১৯৫২ সালের পত্রিকার ভূমিকা যেন এখন ধূসর স্মৃতি। হ্যাঁ, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এখনও কেউ কেউ মনে করে। মনে করে শহীদ সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউররা কি দুর্বার সাহসী ছিল, আগুনে ঝাপ দিয়ে রক্ষা করতে চেয়েছে সেই ভাষা, যে ভাষায় ২০ কোটি মানুষ কথা বলে এখনও। যাদের জন্য এখন ভাষাকে আনুষ্ঠানিকতায় মর্যাদা দেয়া হয়, যাদের জন্য আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

সময় পেরিয়ে যাবার সাথে সাথে মলিন হতে শুরু করেছে উজ্জ্বল ইতিহাস। মানুষ ভুলতে শুরু করেছে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানের কথা, যেই ময়দানেই জন্ম হয় এক আগুণ জ্বালাময়ী ক্ষোভ যার বহিঃপ্রকাশে বাংলা ভাষা পায় তার মর্যাদা।
১৯৪৮ সালের মার্চ মাসের ২১ তারিখে সভা করেন পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ যেখানে তিনি নির্দিষ্টভাবে জানান দেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ভাষা হবে শুধুমাত্র উর্দু।
তিনি বলেছিলেন, “আমি খুব স্পষ্ট করেই আপনাদের বলছি যে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু, এবং অন্য কোন ভাষা নয়। কেউ যদি আপনাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে তাহলে সে আসলে পাকিস্তানের শত্রু।”
পরবর্তীতে যখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে ছাত্রদের সামনে সেই একই অভিব্যক্তি প্রকাশ করলেন, তৎক্ষণাৎ কিছু ছাত্র চিৎকার করে প্রতিবাদ করেছিলেন “না” “না” বলে। তারপরেও অপ্রস্তুত জিন্নাহ থেমে না গিয়ে চালিয়ে গেলেন তার এজেন্ডার বহিঃপ্রকাশ।

আর এভাবেই বীজ বপন হয় ভাষা আন্দোলনের, মর্যাদা রক্ষার এক অসামঞ্জস্যপূর্ণ লড়াই যেখানে রক্ত দিয়ে রক্ষা করা হয় ভাষার মর্যাদা।
সারাদেশে জন্ম নেয় গভীর ক্ষোভ আর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার। তার স্বরূপ, শুরু হতে থাকে আন্দোলনের প্রতিচ্ছবি আর তা বাস্তবে পরিণত হওয়ার পর সরকার ১৪৪ ধারা জারি করে সেই আন্দোলন দমানোর জন্যে।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি (৮ ফাল্গুন ১৩৫৮) ছাত্ররা এই জারি অমান্য করে নেমে পরে রাজপথে। মিছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ আসা মাত্রই চলে ঐতিহাসিক বর্বরতা যেখানে শহীদ হয় বাংলার সেরা সন্তানেরা। আর বাংলা পায় তার মর্যাদা।

 

About Mahmud

Check Also

মেহের আফরোজ শাওন এইটাকে যেখানে পাবেন জুতাপেটা করবেন

8

Leave a Reply